ছাত্রীকে ঢাবি শিক্ষকের অনৈতিক প্রস্তাব, রাজি না হলে ফেলের হুমকি!

“স্যার বিভিন্ন সময় আমাকে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা বলতেন এবং সময় অসময়ে একাকী তার কক্ষে অফিস সময়ের পরে যেতে বলতেন। আমি উনার কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় উনি প্রতিশোধমূলক সব সময় পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার হুমকি দিতেন। এই কারণে ভীত হয়ে পরীক্ষায় আশাতিত ফলাফল না পাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছি আমি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের MSS previous in Social Welfare ইভিনিং এর একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী কথাগুলো বলেছেন। এই ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগে এসব কথা লিখেন এই ছাত্রী।
গত ২৩ জানুয়ারি এই ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর প্রেরিত অভিযোগপত্রে এই ছাত্রী বলেন, “ আমার কোর্স ২০০৮ ফিল্ড স্ট্যাডিজ শিক্ষক প্রফেসর ড.মো. নুরুল ইসলাম স্যার বিভিন্ন সময় আমাকে যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা বলতেন এবং সময় অসময়ে একাকী তার কক্ষে অফিস সময়ের পরে যেতে বলতেন। আমি উনার কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় উনি প্রতিশোধমূলক আমার গবেষণা বহিতে স্বাক্ষর করেন নাই। যাতে আমি চূড়ান্ত মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না পারি। এমতাবস্থায় আমি আমার কো-অর্ডিনেটর ও সভাপতি পরীক্ষা কমিটিকে অবহিত করি এবং আমার অন্যান্য কোর্স শিক্ষকদেরকে বিষয়টি মৌখিকভাবে অবহিত করি। পরে উনাদের সহযোগিতায় আমি মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি। মৌখিক পরীক্ষার পরে উনার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করি গবেষণাপত্রে স্বাক্ষরের জন্য। কিন্তু উনি গবেষণাপত্রে স্বাক্ষর করবেন বলে আমাকে জানিয়ে দেন এবং পরবর্তীতে ইনস্টিটিউটে উনার সাথে সাক্ষাৎ করলে উনি আমাকে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিবেন এবং আমার অন্যান্য কোর্স শিক্ষকদেরকে দিয়ে আমাকে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন।”
অভিযোগে এই ছাত্রী আরো লিখেন,আমি একজন সরকারি চাকুরীজীবী উনি জানেন এবং সেটি উল্লেখ করে আমাকে হুমকি দেন আমার চাকুরীর প্রমোশনের ক্ষেত্রে যাতে MSS এর ফলাফল বা সার্টিফিকেট কোন কাজে লাগাতে না পারি। আর এক্ষেত্রে আমার MSS previous in Social Welfare ১ম বর্ষের ফলাফল জিপিএ- ৩.৩৮ প্রথম ক্লাস পেয়েছি। ২য় বর্ষে বা চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলে আমি যেন আর ১ম ক্লাস পেতে না পারি সেজন্য উনি আমাকে নানা রকম হুমকি দেন ”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগী ছাত্রী বিবার্তাকে বলেন, ঐ স্যার বিভিন্ন সময়ে আমাকে খারাপ প্রস্তাব দিতেন। আর রাজি না হলে ফেল করানোর হুমকিও দিয়েছেন নানাভাবে। ফলে আমি সার্বিক বিষয়ে অবগত করে অভিযোগ দিয়েছি।
তিনি বলেন, যেহেতু আমি প্রস্তাবে রাজি হয়নি, তাই আমার ফলাফলে এর প্রভাব পড়ে কি-না, সেই বিষয়ে শঙ্কিত হয়ে মূলত জানিয়েছি। আর আমি অভিযোগপত্রে যা লিখেছি, সেটাই আমার বক্তব্য।
ঘটনার বিষয়ে অবগত করে মন্তব্য জানতে চাইলে অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. মো. নুরুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, প্রামাণ্য কোনো ডকুমেন্টস ছাড়া এভাবে কোনো প্রফেসর নিয়ে মন্তব্য করা উচিত না। এটি মিথ্যা এবং সম্পূর্ণ মিথ্যা। একটু ঘেঁটে দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন যে, ইনস্টিটিউটের কিছু কলিগ, মেয়েটি এবং তার সাথে যে সমস্ত ব্যক্তিবর্গ জড়িত তারা সকলে মিলে আমার সম্মানহানির চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, গত শুক্র-শনিবার তারা এই বানোয়াট চিঠিটি ছড়িয়েছে। মেয়েটি সেখানে (চিঠিতে) লিখেছে যে কিনা 'কুপ্রস্তাব' দিয়েছে। যার কোনো ডকুমেন্টস সে দেখায়নি। শুধু মুখে বলেই আমার মানহানীর চেষ্টা মাত্র।
অভিযুক্ত এই শিক্ষক বলেন, এই ধরনের কোনোকিছুই ঘটেনি। শুধুমাত্র নিজের পড়ালেখার কাজ না করে নম্বর আদায় করার চেষ্টা মাত্র। এই মেয়ে ক্লাসেই আসেনি তাহলে তাকে আমি এই সমস্ত বিষয় বললাম কবে? নিজের কাজ নিজে না করে অন্যকে দিয়ে করিয়ে নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নম্বর পাওয়া কি এতো সস্তা বিষয় যে, অন্যের মাধ্যমে পড়ালেখার কাজ করিয়ে নম্বর নিতে পারবে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রীধারী একজন শিক্ষক এবং বিবেকবান মানুষ হিসেবে তো এত সহজে নম্বর দিতে পারি না। কাজেই এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্র।
অভিযোগের চিঠি পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. গোলাম আজম বিবার্তাকে বলেন, আমার কাছে একটি আবেদন এসেছে। এটা কোনো অভিযোগ না। আমি এটি রেখে দিয়েছি। এটা পরীক্ষা কমিটির বিষয়। সুতরাং ফলাফলের বিষয়টি তারা দেখবেন।
তিনি বলেন, মেয়েটি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। আমার জানা মতে তার কোনো ক্ষতি হবে বলে আমি মনে করি না। একটা মেয়ে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতেই পারে। কিন্তু সেটার সত্যতা থাকতে হবে।
এদিকে সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের বর্তমান এই পরিচালকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যক্রমে জড়িত থাকার দায়ে ২০২১ সালের ১৬ মার্চ থেকে তিন বছরের জন্য পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় কাজ থেকে বিরত রাখা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, আমি মুখে মুখে শুনেছি। তবে এখনো অভিযোগ হাতে পাইনি। আর অভিযোগ পেলে বিস্তারিত জেনে বলতে পারবো।
উল্লেখ্য, ছাত্রীর অভিযোগপত্রে দেখা যায়, উপাচার্যকে অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।